চরফ্যাশন (ভোলা) প্রতিনিধি: ভোলার চরফ্যাশনে চরের জমির মালিকানা ও পাকা ধান কাটাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে এলাকায় টানটান উত্তেজনা সৃষ্টি হয়ে সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে চরফ্যাশন উপজেলার চরমানিকা ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বেড়িবাঁধের বাইরে কৃষিজমিতে দু’পক্ষের মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধন চলাকালে উভয় পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি অশান্ত হয়ে ওঠে। পরে দক্ষিণ আইচা থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া প্রথম পক্ষের প্রতিনিধি, লালমোহনের বাসিন্দা ও দক্ষিণ-পূর্ব চর আইচা যৌথ কৃষি খামার সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রহমান ও কৃষক ফারুক আখন, সিরাজুল ইসলাম অভিযোগে জানান, ১৯৭২ সালে ২ হাজার ৭০৫ জন কৃষকের নামে যৌথ কৃষি খামারের জন্য প্রায় ৩ হাজার ৮০৫ একর জমি বন্দোবস্ত নেওয়া হয়। আদালতের রায় অনুযায়ী ওই জমিতে কৃষকরা চাষাবাদ ও ধান রোপণ করেন। ধান পাকলে চরমানিকা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান প্রভাষক রেজাউল করিম খন্দকার ও তার লোকজন জোরপূর্বক পাকা ধান কেটে নেওয়ার চেষ্টা করেন।
এতে কৃষকরা ধান রক্ষা ও নিজেদের অধিকার আদায়ের দাবিতে শনিবার দুপুরে জমিতে মানববন্ধনে করেন। এসময় রেজাউল করিমের লোকজন হামলার চেষ্টা করেন। তখন পুলিশকে খবর দেয়া হলে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। কৃষকরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ ও ন্যায়বিচার দাবি করেছেন।
অন্যদিকে মানববন্ধনে অংশ নেওয়া দ্বিতীয় পক্ষের প্রতিনিধি কৃষক মো. আবু তাহের, ইলিয়াছ, ইয়ানুর নুরজাহান অভিযোগে জানান, ভূমিহীনদের জমি না থাকায় দক্ষিণ চর আইচা মৌজায় ১৯৯৯ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ৩৬৫ জন ভূমিহীন কৃষক সরকারের কাছে জমি বন্দোবস্তের আবেদন করেন। আবেদনমালা অনুযায়ী সরকার তাদের অনুকূলে জমি বন্দোবস্ত দিয়ে কবুলিয়ত ও খতিয়ান প্রদান করে। প্রায় ২৬ বছর ধরে তারা ওই জমিতে ভোগদখল ও চাষাবাদ করে আসছেন। পাশাপাশি তারা বিডিএস জরিপেও অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন এবং নিয়মিত খাজনা পরিশোধ করছেন।
তারা আরো জানান, সম্প্রতি বজলুর রহমান ও ফারুক আখন জালিয়াতির মাধ্যমে ভুয়া খতিয়ান তৈরি করে ভূমিহীনদের ভোগদখলীয় জমি কৃষক সমিতির সদস্যদের বলে দাবি করছেন এবং জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা চালাচ্ছেন। শনিবার শতাধিক লোক নিয়ে পাকা আমন ধান কাটতে গেলে কৃষকের বাধার মুখে পড়েন তারা। তবে আমরা কোনো সংঘর্ষে জড়াতে চাই না এবং আইন ও প্রশাসনের মাধ্যমে নিজেদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পেতে চাই।
চরমানিকা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান প্রভাষক রেজাউল করিম খন্দকার বলেন, পূর্ব চর আইচা মৌজায় আমার কোনো জমি নেই। কৃষকরা আমাকে ডাকলে আমি তাদের ডাকে সাড়া দিই। আমি সবসময় আইন মেনে চলেছি এবং ভবিষ্যতেও কোনো সংঘাত বা বিশৃঙ্খলা চাই না। প্রকৃত মালিকানা যাদের, তারাই জমি পাবেন।
সহকারী পুলিশ সুপার (চরফ্যাশন সার্কেল) মো. মেহেদী হাসান বলেন, দুই পক্ষের মানববন্ধনের কারণে এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। উভয় পক্ষকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে স্থায়ী সমাধান করার জন্য বলা হয়েছে। কেউ আইন নিজের হাতে নিলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।








